Skip to main content

folded myth! ...গুপ্ত পুরাণ!

দুপুরে হঠাৎ একটা ফোন পেয়ে জানলাম শাহ আলীর মাজারে ওরস চলছে। বাসার কাছে হওয়ায় ওরস দেখার সুযোগ ছাড়তে মন চাইল না। কিন্তু অসুস্থ শরীর নিয়ে ভিড় ভাট্টায় যাওয়া ঠিক হবে কিনা সে নিয়েও কিছুটা দন্দ্ব ছিল। সঙ্গী জোটাতে দুইজনকে ফোন দিলাম। এরমধ্যে একজন ফটোগ্রাফার হওয়ায় তাকে `ছবি তুলতে পারবি আয়` টাইপ টোপ গেলানো একটু সহজ হল। আরেকজন শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত যাব না, যাব না করে শেষে রাজি হল।

তিনজন মিলে মাজারের প্রধান গেটের কাছে অটোরিক্সা থেকে নামতেই দেখি ভিতরে ঢোকার লম্বা লাইন। পুলিশি পাহারায় আমরাও সার বেধে ঢুকলাম।

বিশাল এলাকা জুড়ে রমরমা আয়োজন। লাল-নীল লাইটিং এ উৎসবের আমেজ। ঢুকতেই দেখি সিন্নি খিচুরি নেয়ার জন্য লম্বা বাটি লাইন। সেটাকে পাশ কাটিয়ে বাম দিক দিয়ে খানিকটা এগুতেই র‍্যাব এর সেন্টার। সেটি পার হয়েই দেখি বাঁশের প্যান্ডেল দিয়ে অসংখ্য ছোট ছোট আখড়া। সেখানে ছোট ছোট দলে বসে মারফতী গান-বাজনা, ধূপ-ধুনো চলছে।

ওরস উপলক্ষ্যে সারা দেশ থেকেই সাধু-সন্ন্যাসী, বাউল-সাধকরা এসে আস্তানা গেড়েছেন। প্রতিটি ছোট আসরেই ৫/১০ জনের দল। মোমবাতি জ্বালিয়ে কল্কিতে দম দেয়া চলছে।
প্রায় শখানেক এরকম আসর বসেছে। যে যার মত ধীরে, নির্বিঘ্নে আসরে বসে আছে, কেউ গান গাইছে। কারো কারো সামনে মোমবাতি জ্বালিয়ে থালা ফেলে রাখা, সেখানে ১০, ২০ টাকার কিছু নোটও জমা পড়েছে।

নানান বয়সী মানুষের সমাহার এখানে। জটা চুল, দাড়ি। কারো সাদা, কারো লাল সেলাই বিহিন দু খন্ডের পোশাক। অনেক নারীও দেখলাম এসব দলে। সংখ্যায় সমান নয়, তবে একেবারে কমও নয় তারা।

আমরা ছবি তোলার জন্য দুএক জনকে সালাম, আদাব জানাতেই তারা সেখানে বসার জন্য আমাদের পাল্টা খাতির করল। দুয়েক্টা কথা বলেই আবার ঘুরে দেখা শুরু করলাম।

এবার মূল মাজারে যাত্রা। মেয়েদের জন্য নির্ধারিত জায়গাটি মাজারের একদম কাছেই, কিন্তু গ্রীল দিয়ে ছোট ছোট জানালা করে দেয়া। একদম কাছে মেয়েদের যাওয়ার সুযোগ নাই। সেখান থেকেই দেখলাম। মাজারের উচ্চতা অনেক, ৬ ফুট উচু মাজারে মখমলের মত কাপরের গিলাফ চড়ানো। আমরা যখন যাই , ওরস উপলক্ষে সেটি সবাই মিলে পালটে দেয়ার কাজ চলছিল। সম্ভবত।

মাজারে যাওয়ার আগেই এখানকার `সিন্নি গাছের` কথা জেনেছি। রহস্য-গল্পের এই গাছ নাকি ৬শ বছর পুরনো। দেখার আগ্রহ ছিল। মাজার ঘেষেই সেই গাছ খুঁজে পেলাম। সিমেন্ট বাধানো , শিকল ঘেরা। গাছ ছুঁতে না পারলেও সেই শিকলেই মানতের রঙ্গিন সুতা, তালা ঝুলিয়ে যাচ্ছিলেন অনেকে। অনেকে মাটিতে হাত রেখে স্পর্শ নিচ্ছিলেন।

মাজারের মাঝামাঝি এদি্কটায়ও নানা দলে ভাগ হয়ে বসে গান চলছে। তবে এখানে সাউন্ড বক্সের ব্যবহার বেশি লাগল আর গাজার ব্যবহার কম। নারী-পুরুষ যারা আছেন, তারাও সন্ন্যাসী পোশাকের কম, সাধারণ পোশাকের বেশি। রাত ৯টা/১০টা বাজলেও নারীর উপস্থিতি এখানেও লক্ষ্যনীয় মাত্রায়।

সেটি পেরিয়ে মসজিদ। সেখানে সাদা পাঞ্জাবির ভীড়। আর মাইকে চলছে ওয়াজ। কোনো নারী চোখে না পড়ায়, সেদিক আর আগাইনি।

এখানে একটি একক বাউন্ডারির মধ্যে তিন ধরনের মেজাজ দেখলাম। তিন আবহের শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থান।

হাজার হাজার মানুষ নানান কারণ নিয়ে জমা হয়েছে মাজারে। তারা একমনে জিকির করছেন, কেউ কেউ কাদছেনও। ফকির, মওলানা থেকে চোর, ধান্দাবাজ কোনটিরই অভাব থাকার কথা না। এছাড়া, তাবিজ-কবজ, পাথর, সুতা সহ নানান জিনিসের এ ছোট ছোট পসরা বসেছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। মুস্কিল আসান করতে পুরুষ ও নারী সাধুর সামনে হাত পেতে বসেছেন অনেকে।

মাত্র ১ ঘন্টা ঘুরতেই ঘড়ির কাটায় রাত দশটা বাজল। কিন্তু ওরস যেন রাতের জমজমাট আসরের জন্য তৈরি হল মাত্র। মানুশের ঢল কেবল বাড়ছেই। তিন দিনের ওরসের শেষ দিন আগা্মীকাল। সেদিন এই ঢল হবে সমূদ্র-সমান। আজ রাত তাই এই ঢল বেড়েই চলবে। শহরের ভিতরে আরেক জাদুর শহর থেকে বেরিয়ে আসলাম আমরা।



ইন্টারনেটে শাহ আলী সমর্পকে যা তথা ও মিথ পেলাম তা থেকে কিছুট ঃ
বাগদাদের সুলতান ফকরুদ্দিন শাহ্ (র) এর পুত্র শাহ আলী। বড় পীর আব্দুল কাদির জিলানি (র) এর কাদরিয়া তরিকার অনুসারি। বাগদাদ থেকে শাহ আলীসহ ৪০ জন ধর্মীয় সাধক দিল্লিতে এসেছিলেন। এরপর শাহ্ জালাল (র) এর নির্দেশে ফরিদ পুর
জেলার গের্দা নামক এলাকায় ইসলাম প্রচারে আসেন।

পরে ঢাকায় এসে মিরপুরে আস্তানা করেন। শাহ আলী বাগদাদীর দরগাহের পূর্বদিকে প্রবেশ পথের উপরে উৎকীর্ণ শিলালিপিতে আদি মসজিদ নির্মাণের তারিখ লেখা আছে ১৪৮০ সাল (৮৮৫ হিজরি)। এটি উৎকীর্ণ করা হয় সুলতান শামস উদ্দিন ইউসুফ শাহের সময়ে।

মিরপুরে এসে কোনো রকম খাবার গ্রহণ না করে ৪০ দিনের জন্য শাহ আলী মসজিদের দরজা বন্ধ করে ‘ফানাফিল্লাহ’ বা আল্লাহর সাথে মিলনের ইবাদত করতে থাকেন। ৪০ দিন পূর্ণ হওয়ার মাত্র একদিন আগে ভেতর থেকে শব্দ শোনা যায় এবং তাকে সেখানে রক্তাক্ত মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। সেখানেই তাকে সমাহিত করা হলে তখন থেকে এটি মাজারে পরিণত হয়।

#সাধক #শাহ #আলী বাগদাদী (র.) মাজার।
#বার্ষিক ওরস। #মিরপুর দরগা। ঢাকা। ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬।















Comments

Popular posts from this blog

টগবগ টগবগ ছুটছে শুধু…

ঘোড়ার খুরের আওয়াজ জনসন রোড হয়ে সদরঘাট যাওয়ার পথে কান পাতলে এখনো ভেসে আসে ঘোড়ার খুরের আওয়াজ। মধ্য দুপুরের কড়া রোদে চাবুক মেরে ঘোড়া ছুটিয়ে সওয়ারি নিয়ে যাচ্ছেন ব্যস্ত কোচোয়ান। এ পথেই ঘোড়ার গাড়িতে বুড়িগঙ্গার ধারে নিজের মহলে ফিরতেন ঢাকার নবাব,সে শত বছর আগে । আজ নবাব নেই , কিন্তু রয়ে গেছে তার নবাবী বাহন। পুরান ঢাকার ঐতিহ্য ও আভিজাত্যের প্রতীক আজ এই ঘোড়ার গাড়ি। এই ঘোড়ায় টানা গাড়ির ইতিহাস ১৬০ বছর পেরিয়ে গেছে। তবে ঢাকাবাসীর কাছে আজও ফুরায়নি এর কদর। সাধারণের মুখে যার নাম - টমটম। গুলিস্তান টু সদরঘাট শহরের প্রতিদিনের ঘৌড়দৌড়ের জীবনে যন্ত্রচালিত গাড়ির ভীড়। তবু ঢাকার একাংশে এখনো কোনরকমে জায়গা করে আছে ঘোড়াগাড়ি। বাস - ট্রাক , মোটর সাইকেলের সাথে পাল্লা দিয়ে ঘোড়ার পা  টিকে থাকার তাগিদে দৌড়াচ্ছে। গুলিস্তানের গোলাপ শাহ মাজার থেকে সদরঘাট। নিয়মিত এই রুটে যাত্রী পরিবহন করছে তারা। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি চলছে জীবনের ঘোড়দৌড়। একটি ঘোড়ার গাড়ি সাধারণত ১০ জন করে যাত্রী বয়। ভাড়া জনপ্রতি ২০ টাকা। মাঝে মধ্যে শখের বশে ঘোড়ার গাড়িতে যাতায়াত করেন ঈসমাইল হোসেন । বল্লেন , বাস...
  ভক্তি আন্দোলন ও নারীত্বের তকমা অতিক্রম করার গল্প এক: ভক্তি আন্দোলন সমাজ, ধর্ম আর রাজনীতির বাধাবিপত্তিকে ছাড়িয়ে ভারত জুড়ে এক অভূতপূর্ব মানবতার বার্তা ছড়িয়ে একটি অভূতপূর্ব আলোড়ন জাগিয়ে তুলেছিল। ভক্তিবাদীরা প্রচার করেন, সমস্ত ধর্মই সমান। প্রথা সর্বস্ব আচার অনুষ্ঠানের পরিবর্তে জীবে প্রেম ও ঈশ্বরের প্রতি অখণ্ড ভক্তি ও সমর্পণই মুক্তির পথ। তারা বিশ্বাস করতেন, মানুষের মর্যাদা নির্ভর করে তার কাজে, জন্মের ওপর নয়। ভক্তিবাদে ঈশ্বরের সঙ্গে ব্যক্তির মিলন হয় প্রেমের দোহাইয়ে। এই আন্দোলন মধ্যযুগে এনে দিয়েছিল স্বস্তির দমকা হাওয়া যা এই উপমহাদেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল আর এই ভক্তি সুর-মাধুর্যে মানুষের মধ্যে দিয়েছিল এক মুক্তির বার্তা। জনমানুষের মধ্যে জাগ্রত হয়েছিল মুক্তির গান। কি সামাজিক ভাবে, কি ধর্মীয়ভাবে এই আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন নারীরাও। ভক্তি আন্দোলনে নারীদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ শুধু সমাজ-বর্ণ-সম্প্রদায়ের বেড়াজাল ভাঙার ক্ষেত্রেই নয়, নারী-পুরুষের সামাজিক- লৈঙ্গিক বৈষম্য ভাঙতেও ভূমিকা রেখেছে। উপরন্তু সেই আন্দোলনে বেশকিছু দিক বদলকারী প্রভাব রেখেছিলেন নারীরাই। পর্যবেক্ষকরা নানা কা...

নাটালি ডিয়াজ: কী হয় যদি আমি ‘পোস্টকলোনিয়াল’য়ের মত শব্দের পাশে ‘ভালবাসা’র মত একটা শব্দ বসাই? - Rottenviews

নাটালি ডিয়াজ: কী হয় যদি আমি ‘পোস্টকলোনিয়াল’য়ের মত শব্দের পাশে ‘ভালবাসা’র মত একটা শব্দ বসাই? - Rottenviews : নাটালি ডিয়াজ: কী হয় যদি আমি ‘পোস্টকলোনিয়াল’য়ের মত শব্দের পাশে ‘ভালবাসা’র মত একটা শব্দ বসাই? Shameema Binte Rahman Interview December 3, 2021 আদিবাসী, ক‍্যুয়ার, এবং কবি নাটালি ডিয়াজ। ক‍্যাটাগরীক‍্যাল এই তিন আইডেন্টিটির বাইরে আরো অনেক পরিচয়ে তাকে পরিচিত করা হয় বা তিনি পরিচিত হন, কিন্তু ডিয়াজ এই সকল ‘পিন-আপ’ পরিচয় ছাটাই করে ‘আনপিনাবল’ হয়ে ওঠার প্রক্রিয়াও জারি রেখেছেন। কবিতা, কবিতার ভাষা, ভাষার খেলা, পরিচিত হওয়ার পরিচয়ের খোপ, খাপ বদলানোর ফাঁদ, প্রেম, উপনিবেশকারী আর উপনিবেশের অধীনস্তের সম্পর্কের মারপ‍্যাঁচ দুলে দুলে নেচে নেচে ছড়ায়ে ভেসে ওঠে তার শব্দে, কবিতায়। এই বছর তিনি পুলিৎজার পান, পোস্টকলোনিয়াল লাভ পয়েম (২০২০)/ Postcolonial Love Poem বইয়ের জন‍্য। এটা তার দ্বিতীয় কবিতার বই, প্রথম বই হোয়েন মাই ব্রাদার ওয়াজ অ‍্যান এজটেক (২০১২)/ When My Brother Was an Aztec। অ‍্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে তিনি ক্রিয়েটিভ রাইটিং বিষয়ে পড়াচ্ছেন। স্কুল জীবনে বাস্কেটবল খেলতে খেলতে তিনি প্রফেশনাল ...